Search This Blog

Saturday, March 10, 2012

লাই ডিটেক্টর এবং মাইক্রোএক্সপ্রেশন(অভিব্যক্তির)প্রযুক্তি-মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিতে যার অবদান অসীম

মানুষের আবেগের সাতটি সার্বজনীন মুখাভিব্যাক্তি(এফ.বি.আই শনাক্তকৃত)










মানুষের মুখাভিব্যাক্তি নিয়ে গবেষণা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।চোখের অভিব্যক্তি,নাক সংকোচন,ভ্রু নিরীক্ষণ,গাল সংকোচন ইত্যাদি পরীক্ষা করে মানুষের মনের ভেতর কি চলছে তা অনুমান করার উপায় মানুষ বহু আগেই রপ্ত করে নিয়েছে।এ ধরণের বিদ্যাকে মাইক্রোএক্সপ্রেশন বলা হয়।এছাড়াও আবিষ্কৃত হয়েছে "লাই ডিটেক্টর" বা মিথ্যা নির্ণায়ক যন্ত্র। 

লাই ডিটেক্টর যন্ত্র:
______________________
মিথ্যাকথা বলা:

মানুষ মিথ্যা কথা বললে তার চেহারায় বেশ কিছু অভিব্যাক্তি প্রকাশ পায়।মিথ্যা বলার সময় চোখের অভিব্যক্তি,নাক সংকোচন,ভ্রু নিরীক্ষণ,গাল সংকোচন ইত্যাদি বিবেচনা করে মনোবিজ্ঞানীরা মোটামুটিভাবে মানষের ছয় রকমের অভিনয় কৌশলকে শনাক্ত করেছেন। 
নিচের চিত্রে ব্যাপারটি লক্ষণীয়:

 
একটি বাড়িতে খুন হয়েছে। বাড়ির সদস্য, পরিচারক সবাই উপস্থিত। একে অন্যকে সন্দেহও করতে পারছে না। অবশেষে শরণাপন্ন হতে হল পুলিশের। পুলিশ সকলের সঙ্গে কথা বলল। রহস্য ক্রমেই জটিল হতে থাকে। শেষে রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য সকল সদস্যকে বসানো হল ‘লাই ডিটেক্টর’-এর সামনে। কয়েকটি শব্দ-প্রয়োগে শারীরিক টানাপোড়েনের প্রকাশ ঘটে এই যন্ত্রের মাধ্যমে। চিহ্নিত হয়ে যায় অপরাধী।
 
কি এই লাই ডিটেক্টর?
লাই ডিটেক্টরের বাংলা হল ‘মিথ্যে ধরার যন্ত্র’।শারীরিক-বিজ্ঞানের কয়েকটি পর্যায়কে বিশ্লেষণ করাই হল এই যন্ত্রটির কাজ।প্রতিক্রিয়াকাল, রক্তচাপ, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপ্রকৃতি, পেশির মধ্যে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তরঙ্গ, শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপ্রবাহের তারতম্য—মূলত এই নিয়েই লাই ডিটেক্টরের কাজ।

 

কিভাবে কাজ করে?
প্রত্যেক মানুষেরই মানসিক অনুভূতির সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। রেগে গেলে যে-প্রতিক্রিয়া হয়, আনন্দে তেমনটা হয় না। আবার দুঃখের সময়ে তার শরীরে বিদ্যুৎপ্রবাহ হয় অন্যরকম। ঠিক সেই রকমই মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে শারীরিক বহিঃপ্রকাশ হয় এক-এক জনের এক-এক রকম। কারও কান লাল হয়ে যায়, কেউ ঢোঁক গেলে, আবার কারও কথা জড়িয়ে যায়। মনের তখন দোদুল্যমান অবস্থা। সত্য উদ্‌ঘাটনের বিরুদ্ধে গিয়ে মনকে কাজ করতে হয়। প্রবল টানাপোড়েন চলে দুই বিপরীতমুখী শক্তির মধ্যে। এর ফলে আভ্যন্তরিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। শরীরের ভিতরে চলতে থাকে ঘাত-প্রতিঘাত। অপরাধী অনুভব করে, কিন্তু বাইরে থেকে এই পরিবর্তন বোঝা যায় না। লাই ডিটেক্টরের সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাহায্যেই রহস্যের উন্মোচন হয়।

 
পলিগ্রাফ

‘পলি’ মানে একাধিক, ‘গ্রাফ’ মানে রেখাচিত্র। বিশেষজ্ঞদের কাছে এজন্যই এ-যন্ত্রটি ‘পলিগ্রাফ’। অবশ্য সাধারণ মানুষ তাকেই লাই ডিটেক্টর নামে জানে। এই যন্ত্রটি থেকে একাধিক শারীরিক পরিবর্তনের রেখাচিত্র একসঙ্গে পাওয়া যায় বলেই একে বলা হয় পলিগ্রাফ। যে-ব্যক্তিকে লাই ডিটেক্টরের সামনে বসানো হয়, তার নাকে ও মুখে হাওয়া-ভর্তি রবারের আবরণ পরিয়ে দেওয়া হয়। এর অন্য প্রান্ত যুক্ত থাকে একটি ধাতব কলমের সঙ্গে এবং সেই কলমের নিবও আলতো করে বসানো থাকে চলমান কাগজের ওপর। নিশ্বাস-প্রশ্বাস ওঠা-নামার সঙ্গে সঙ্গেই কলম কাঁপতে থাকে। এর থেকে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপ্রকৃতিও বোঝা যায়। ব্যক্তিবিশেষের ওপর নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপ্রকৃতির তারতম্য ঘটে। উত্তেজনায়, আবেগে কারও দম বন্ধ হয়ে যায়। কেউ ঘন ঘন শ্বাস নেয়। বিশেষ কোনও শব্দের প্রতিক্রিয়ায় শ্বাসের ছন্দ হারিয়ে যায়। তা-ই ধরা পড়ে যন্ত্রের মাধ্যমে। বিচারকদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমেই অপরাধী চিহ্নিত হয়।

 
রক্তচাপ মাপার জন্য চিকিৎসকরা ‘স্ফিগ্‌মোম্যানোমিটার’ ব্যবহার করেন। মনে কোনও রকম উত্তেজনা ঘটলে কারও স্বাভাবিক গড় রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। বিশেষ বিশেষ শব্দের প্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপেরও তারতম্য ঘটে। কখনও বেড়ে যায়, আবার কখনও বা কমে যায়। রক্তচাপের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুটি মানকেই বিচার করা হয়। পরিভাষায় এদের বলে ‘সিসটোলিক’ ও ‘ডায়াসটোলিক’ প্রেশার। লাই ডিটেক্টর যন্ত্রে শুধুমাত্র সর্বোচ্চ মানটিই নেওয়া হয়।

 
লাই ডিটেক্টর দিয়ে তদন্ত করার সময়ে শব্দ প্রয়োগ করাটা বিশেষ ব্যাপার। মনোবিজ্ঞানীরা এমন কিছু শব্দ চয়ন করেন, যা অপরাধীর মনকে দোলা দেয়। অপরাধের প্রক্রিয়া এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সাধারণত শব্দ চয়ন করা হয়। দুটি একই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রেও শব্দ-তালিকা ভিন্ন হতে পারে। অপরাধ কোথায়, কখন, কীভাবে সংঘটিত হয়েছে এবং কী কী ‘ক্লু’ বা সূত্র পাওয়া গেছে— সেইসঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা কীভাবে জড়িয়ে পড়েছে—এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই শব্দ-তালিকা তৈরি করা হয়। শব্দ প্রয়োগের ফলে ক্রিয়া বা উত্তেজনার জন্য কোনও ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে যে-সময় লাগে, তাকেই বলে ‘প্রতিক্রিয়াকাল’। কোনও ব্যক্তি যদি খুন করে, আবার কেউ যদি চুরি করে, তবে ‘খুন’ বা ‘চুরি’ শব্দ দুটি সঠিক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রয়োগে তার প্রতিক্রিয়াকাল অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এই প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়া দরকার। কারণ, বিশেষ শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনও নিরপরাধ ব্যক্তিরও প্রতিক্রিয়াকাল দীর্ঘতর হতে পারে। যদি সেই শব্দ তার জীবনের কোনও সময়কে স্পর্শ করে থাকে।

 
মাংসপেশির বৈদ্যুতিক রোধ লাই ডিটেক্টর-এর পরিবর্তনও লক্ষ করে। আমাদের পেশিগুলি বিদ্যুৎ পরিবাহী। এর ভিতর দিয়ে মৃদু অথচ সহনীয় ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহিত করানো যেতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিবাহী মাধ্যমের নিজস্ব বিশেষ রোধ থাকবেই। পেশিরও আছে। কিন্তু অন্যান্য জড় পরিবাহী পদার্থের মতো পেশির রোধ সব সময় একই থাকে না। বিভিন্ন মানসিক অবস্থার সঙ্গে এর পরিবর্তন হয়। দেখা গেছে, যত বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, পেশির রোধ তত বেড়ে যায়। শরীরের পেশির সঙ্গে ‘গ্যালভানোমিটার’-এর সংযোগ করে দিলে দেখা যাবে এর কাঁটা থিরথির করে কাঁপছে। আবার বিভিন্ন উত্তেজিত অবস্থায় পেশির রোধ বিভিন্ন রকমের হওয়ায় কাঁটার বিক্ষেপও বিভিন্ন রকমের হয়। বিভিন্ন উত্তেজক শব্দ প্রয়োগের ফলে কাঁটার যে-বিক্ষেপ হয়, তা থেকে ব্যক্তির অপরাধবোধের সঙ্গে কতখানি সম্পর্ক, তা-ও নির্ণয় করা যায়। গ্যালভানোমিটারের সঙ্গে পেশির এই প্রতিক্রিয়ার পারিভাষিক নাম ‘গ্যালভানিক স্কিন রেসপন্স’ বা ‘জি. এস. আর.’। লাই ডিটেক্টর-এর একটি যন্ত্রাংশের কাজ হল এই জি. এস. আর. মাপা।

 
 
আধুনিকপদ্ধতিতে পলিগ্রাফ নির্ণয়
 
এফ.বি.আই অফিসে প্রাপ্ত পলিগ্রাফ অ্যানালাইসিস চলছে

১৯২৩ সালে মনোবিজ্ঞানী জে. এ. লার্সন প্রথম মনোবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে মিথ্যা ধরা যেতে পারে তা হাতে-কলমে দেখান। ১৯২৬ সালে ডঃ কিলার নামে এক প্রযুক্তিবিদ তত্ত্বগুলি নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক যন্ত্রের রূপ দেন, যা ‘কিলার পলিগ্রাফ’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৪২ সালে রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী এফ. ই. ইনবো কীভাবে পলিগ্রাফের তত্ত্বগুলি বিশ্লেষণ করতে হবে, তার প্রামাণ্য কৌশল উদ্ভাবন করেন। মনোবিজ্ঞানী এ. আর. লুরিয়া লাই ডিটেক্টরে নতুন একটি পদ্ধতি সংযোজিত করেছেন। কোনও কাজ করতে গিয়ে আমরা যদি টেনশন বোধ করি, তা হলে আমাদের হাত কাঁপতে থাকে (সেকেণ্ডে প্রায় ১০ থেকে ১২ বার)। খালি চোখে এই কম্পন বোঝা যায় না। কিন্তু প্রত্যেকটি আঙুলের সঙ্গে সুইচ যুক্ত থাকলে তাতে চাপের ফলে রেখাচিত্র তৈরি হয়। মিথ্যে কথা ধরায় এই পদ্ধতি বেশ কাজ দেয়।

মাইক্রোএক্সপ্রেশন প্রযুক্তি:
_______________________________

 
মাইক্রোএক্সপ্রেশন একধরণের মনোভিব্যাক্তি,যা মানুষ অজ্ঞতাবশত কোন আবেগ লুকানোর সময় অসতর্কভাবে প্রকাশ করে থাকে।এটি বিশেষভাবে ৭টি ভাগে বিভক্ত।এগুলো হল:ক্রোধ,বিরক্তি,খুশী,ভয়,দু:খ,চমক এবং তাচ্ছিল্য।
 

প্রফেসর পল ইকম্যান "কিভাবে মিথ্যা নির্ণয় করা যায়"এবং "চোখ নড়াচড়া এবং মিথ্যা" এবং "মিথ্যাবলা ও শারিরীক ভংগিমা"নামে তিনটি আর্টিকেল লিখে বিখ্যাত হয়ে যান।তিনি ডারউইনের বই"মানুষ এবং পশুপাখির আবেগাভুনূতি" মাইক্রোএক্সপ্রেশনের ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত দেন।

 
প্রফেসর পল ইকম্যান


হোগার্ড এবং আইজাক ১৯৬০ সালে মাইক্রোএক্সপ্রেশনের তত্ব আবিষ্কার করেন।"সাইকোথ্যারাপিতে ইগো ম্যাকানিজমের নির্দেশক হল মাইক্রোএক্সপ্রেশন" এই স্লোগানটি নিয়ে ১৯৬৬ সালে দেখান কিভাবে মাইক্রোএক্সপ্রেশনের ব্যাপারসেপার নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেছেন।


No comments:

Post a Comment